পৃথ্বীশ দত্ত
॥ আশ্বিনের আকাশে ॥
পৃথ্বীশ দত্ত
আমাদের একশত আটটি নীলপদ্ম নেই,
আমাদের চোখের মণি -
আশ্বাসে লেগে থাকে আশ্বিনের আকাশে,
দেবপুরীর দেদার বিলাসিতা ও দৈববৈভব রেখেও,
এখনো পৃথিবীকে নিরাপদ ভেবে-
মা আসেন মায়ের সংসারে প্রণয়মত্ততায়,
নিভৃত স্নেহের শীতল আঁচলে অন্তত তিন রাত্র সমারোহ হোক I
মেয়েই মা, মা-ই তো মেয়ে,
সেই মা, গর্ভস্বর্গে ভ্রুণের রক্তাক্ত লাশ নিয়ে,
অবজ্ঞার সমূহ সাগর সাঁতারে
ধর্ষণে বিক্ষত শরীরটাকে
লাঞ্ছনার দগদগে ক্ষতটাকে
প্রবঞ্চনার প্রভুত আলপিনের
আঘাতকে টেনে নিয়েও --
মর্ত্য মায়ের কোনো আরোপিত স্বর্গ নেই,
স্বর্ণ শোভিত প্রেমের প্রাচুর্য নেই,
তবু সমস্ত ক্ষতের গায়ে উপশমের উল্লাস পড়বে,
প্রবল সমারোহে ।
দশ হাতে জ্বলে ওঠে গার্হস্ত্যের মরমি আলো-
অন্তত তিনটি রজনীর জন্য রচিত হোক মৃন্ময়ী স্বর্গ !
তাই আমাদের মায়েরা, আমাদের মেয়েরা,
নষ্ট সময়ের দুঃশাসনে
ভ্রূকুটি-বিষাদকে অঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে,
জল কাঁদা, পাথর ও সমুদ্র সংসারে,
স্বর্গ সৃজনী আমাদের মায়েরা--
নিরবে রচনা করেন স্বর্গের সকল বৈভব !
তাদের আর কোনো স্বর্গ নেই
অন্তত তেরাত্রের জন্যও....
আমাদের একশত আটটি নীলপদ্মও নেই,
আমাদের মেয়েদের আছে চোখের মণি
আমাদের মায়েদের আছে চোখের মণি,
আমাদের মেয়েদের আছে বিত্তময় হৃদস্বর্গ,
আশ্বিনের আকাশে তাই কান্নার ঐশ্বর্যে
আমাদের মেয়ের গায়ের সৌরভ লেগে থাকে !
প্রেমিক চ্যালেঞ্জবর
লক্ষ্মণরেখা টেনে দিলে আমি রাবণও হতে পারি,
ভালোবাসা যত আছে
ছল ও চাতুরি আছে,
শত শত জটায়ুকে বধ করে
প্রেমিক রাবণ আমি হতে পারি অক্লেশে !
অশোকবটিকা কুসুমিত জীবন তপস্যায়
যে প্রাসাদ আমি সাজিয়েছি হৃদয়ে,
স্বর্গোত্তম স্বপ্ন দিয়ে রমণীয় করেছি প্রিয়তমেষু
জলধিবেষ্টিত এই ক্ষুদ্র প্রাণখণ্ড,
বৈকুণ্ঠ ম্লান করে জ্বলে ওঠে স্পন্দন-আয়ুধ,
সেকি তবে বৃথা যাবে ভীরু তঞ্চকতায় !
হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো রামরাজ্য নেই
হৃদয়েই ঘটে কত অবাঞ্চিত লংকাকান্ড,
তবু সেও তো দেবতার দান !
দানছত্র অবারিত রেখে
হৃদয় হরণ করে নিঃস্ব হয়ে যাবো,
এই প্রোমিজ নিয়েই পৃথিবীতে এসেছি !
কেউ প্রতিবন্ধক হলে --
এখানেই লেখা হবে পৃথিবীর শেষতম রামায়ণ !

Post a Comment