শাশ্বতী নন্দ
আসছে উমা জাগছে উমা আবার
শাশ্বতী নন্দ
উমা এলি, উমা!
আয়, বোস তো দেখি কাছে, রাত জেগেছিস কত
মুখটা যে তোর শুকিয়ে গেছে কাজের ধকল এত
হাত মুখটি ধুয়ে এবার মুখে কিছু দে মা
বোঝাগুলো সরিয়ে মাথার একটুখানি ঘুমা।
সেই তো আবার যাবি, ধরবি স্টেথো আতুর কত বুকে
নিজের কষ্ট নিজের চিন্তা ভুলে সারিয়ে তোলার সুখে
দিন আর রাত এক করা তোর হাতের ছোঁয়া পেয়ে
ওরে আমার মেয়ে
জানি মানুষগুলো
খুঁজে পাবে আবার বাঁচার আলো।
হাত মুখটি ধুয়ে এবার তাই তো বলি উমা,
মুখে কিছু দে মা
বোঝাগুলো সরিয়ে মাথার একটুখানি ঘুমা।
ঘুমন্ত তোর মুখেই তো মা শুনি
আমার বুকের সেই যে ধুকপুকুনি
যেমনটা ঠিক তখন শুনেছিলাম
যেদিন প্রথম গর্ভে আমার পেলাম
তোর আগমনীর আনন্দ স্পন্দন
স্বপ্ন চোখে বিহ্বল পাগল মন
রাত জেগেছি কত দুজন মিলে
কবে কখন আসবে উমা বলে,
এখনও তো রাত জাগিরে মা
কত বড়ো কত কাজের উমা
এখন জাগি গর্বে, আশঙ্কায়
বুকের মাঝে ঘর বেঁধেছে ভয়।
যতই বলিস উমা, এত চিন্তা কোরো না তো
সব চলছে নিয়মেতেই, লুকোস কষ্টগুলো যত।
তোর নিভে যাওয়া মুখ, গালে শুকনো নোনা জল
তোর লুকিয়ে রাখা রাগ, তাও দেখতে তো পাই বল!
তোর না বলা সব কথা, তোর মুখের সব কাঁপন
আমার চোখে যে মা আঁকা হয়রে ছবির মতন।
স্নান করে আয় মা, জল দে চোখে মুখে
বাড়ছি আমি ভাত, আজ খাইয়ে দেবো তোকে।
করবি কত স্নান, আয় মা এবার আয়
ভাত বেড়েছি কখন তারা যে সব জুড়ায়।
ডেকে ডেকে তোর পাই না কেন সাড়া!
আয় তো রে মা আয়, একটু পাশে দাঁড়া
কেন আমার এমন করছে ভীষণ ভয়
আয় কাছে আয় মাগো, কোথায় গেলি আয়।
এ কী, আমি ঘুমিয়েছিলাম বুঝি! এখন তো আর ঘুম আসে না চোখে
ঘুমকে ডাকি ঘুম আয়, আয় ঘুম, উমায় আমার জাপটে রাখি বুকে
চোখ বুজলে তবেই তোকে পাই, জাগি যখন শুনি ওরা বলে
তুই আর নেই কোনোখানেই নেই, নেই নেই নেই কোথায় গেছিস চলে
বাড়িতে নেই হাসপাতালে নেই, নেই তুই তোর বন্ধুদের আড্ডায়
কোথায় নিয়ে গেল ওরা তোকে, নেই রে তো তুই কলেজ রেস্তোরাঁয়!
তুই নাকি নেই, ওই বলছে ওরা, যাদের ছাতার তলায় তোকে দেখে
ভেবেছিলাম সুরক্ষিত তুই, ভরসার শ্বাস ভরেছিলাম বুকে।
বলছে ওরা ক্লান্ত হয়ে তুই, ঘুমিয়ে আছিস হাতে ঢেকে চোখ
আমরাও তাই মেনেছিলাম মা গো, মাথার ওপর ওরাই তো রক্ষক।
তুই যদি আর কোনোখানেই নেই, কারা তবে এমন মা মা ডাকে
বলছে কারা যাসনি কোথাও তুই, জাগিয়ে এমন তুলল কারা তোকে!
উজাড় আমার হয়েছে ঘর তবু, ভাঙা বুকের রুদ্ধ নিঃস্ব দ্বারে
ধাক্কা কারা দিচ্ছে থেকে থেকে, এত আদর, এমন অধিকারে!
এদের মাঝেই আছিস তবে তুই, এরাই আমার অন্ধ চোখে আলো
সব উমাতেই এখন তোকে পাই, এরাই তো মা বাঁচার পথ দেখালো।
বলছে এবার অসুর নিধন পালা, যেতে হবে যুদ্ধে উমার সাথে
বিশ্বজুড়ে জেগেছে সব উমা, হাত মিলিয়ে লক্ষ উমার হাতে।
যাই গো মা যাই, লক্ষ প্রদীপ নিয়ে, সবখানেতেই দাঁড়িয়ে আছিস তুই
তিলক এঁকে দেব সব কপালে, কে বলেছে আমার উমা নেই!
জেগেছে আজ লক্ষ দেবসেনা, অস্ত্র হাতে লক্ষ গণপতি
লক্ষ নন্দী লক্ষ ভৃঙ্গী সাথে, লক্ষ লক্ষ লক্ষ্মী সরস্বতী
জেগেছে আজ লক্ষ শূলপাণি, খুলেছে তার তৃতীয় নয়ন
উমা কাঁধে লক্ষ নটরাজ, নাচবে মহাপ্রলয় নাচন…
ওরে তোরা বাজারে ঢাক বাজা, উলু দে সব, শঙ্খধ্বনি কর
আসছে উমা, জাগছে উমা আবার, আলোয় আলোয় ভাসছে আমার ঘর
পদ্মবনে জাগিয়ে মাতন তার, আসছে উমা কাশের উজান বেয়ে
আসছে রে সে আসছে ফিরে ঘরে, আসছে উমা শিউলি রাঙা পায়ে…
নতুন করে অসুর নিধন হবে, রক্তবীজ যে এখন আমার মা
প্রতিটা তার রক্ত ফোঁটার থেকে, উঠছে জেগে নতুন আর এক উমা
শুরু হল নিধন থেকে বোধন, শেষ হবে না এবার দেবীপক্ষ
আসছে উমা জাগছে উমা আবার, এক হারিয়ে জাগছে উমা লক্ষ
জ্বালাও মশাল বাজাও কাঁসর শঙ্খ, ওই তো নিয়ে ত্রিশুল তলোয়ার
আগুন চোখে দাঁড়িয়েছে রুদ্রাণী, আসছে উমা, জাগছে উমা আমার…

Post a Comment