শর্বাণীরঞ্জন কুন্ডু
প্রতিবাদী গদ্য
প্রিয় অনুজ পীযুষ বিশ্বাস এর উপরোধ পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান অবক্ষয় নিয়ে কিছু লিখে দিতে হবে।
আমি দিল্লিতে থাকি। তবে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আশৈশব। কারণ হিসেবে বলব আমার পিতা মাতা পূর্ববঙ্গের যা অধুনা বাংলাদেশ। কিন্তু তারা কলকাতায় চলে আসেন স্বাধীনতার আগেই। মাতামহ কলকাতায় বাসস্থান তৈরী করেন। কিন্তু পিতামহ দেশভাগের পরে ভদ্রাসন হারান। বাবা চাকরী সূত্রে দিল্লী বাসী হয়ে যান। কিন্তু সরকারী ব্যবস্থাপনায় যেহেতু একটা স্থায়ী ঠিকানা থাকতে হয়, মাতামহের কলকাতার বাসস্থান হয়ে যায় আমাদের স্থায়ী ঠিকানা। এইকারণেই কলকাতার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ। এতদ্ব্যতীত আমার ঘরণী পশ্চিমবঙ্গ ললনা। তাই আমি ওতোপ্রতোভাবে পশ্চিমবঙ্গ সংপৃক্ত।
কলকাতা বিশ্বযুদ্ধ দেখেছে। পশ্চিমবঙ্গের দুর্ভিক্ষ কলকাতাকে ভীষণভাবে স্পর্শ করেছে। কলকাতা বিভাজনের দাঙ্গা দেখেছে। কলকাতা বিভাজন জনিত পূর্ববঙ্গ আগত মানুষের ভীড় ও দুর্দশা দেখেছে। এই কারণেই কম্যুনিজম গ্রাস করেছে পশ্চিমবঙ্গকে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের দুর্দশা নিয়ে এসেছে।
বাঙ্গালী বর্ণ শঙ্কর জাতি। তাই তার বিশ্বাসের যায়গা বড় নড়বড়ে। তার চিন্তাভাবনা বড়ই গোলমেলে। বিশ্বাস অবিশ্বাসের যায়গা বিভ্রান্তিকর। কম্যুনিস্টরা এসে প্রতিষ্ঠা করল 'ডিকটেরশিপ অব দ্যা পার্টি ক্যাডার'। কম্যুনিস্টরা ইকনমিক্স-এর ফান্ডামেন্টালস ভুলে গেল। অর্থনীতি বলে শিল্পের জন্য দরকার জমি, বিত্ত ও শ্রম। ওরা শ্রমকে গুরুত্ব দিল। বিত্তবানদের হেনস্তা করল। জমি টুকরো টুকরো করে ভূমিহীনদের বিলিয়ে দিল। তো শিল্পটা হবে কোথায়। বিত্তও চলে যেতে লাগল। শ্রমিকদের কাজ গেল। তো তারা উঞ্ছবৃত্তি ছাড়া করবে কী? পশ্চিমবঙ্গের শিল্পপতিরা চলে গেল মুম্বাই, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ। ক্রমে ক্রমে ব্যাঙ্গালুরু। হরিয়ানায় গজিয়ে উঠল ফরিদাবাদ, গুরুগ্রাম। উত্তরপ্রদেশে গাজিয়াবাদ। এমনকি দিল্লি। যখন প্রচেষ্টা হল শিল্প স্থাপনার, এই ছোট কৃষকরা জমি দিতে রাজি হল না। শিল্প স্থাপনা করা গেল না। ইতিমধ্যে সরকারী চাকরীতে কয়েকগুন বেতন বৃদ্ধি হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব চাকরী বিক্রি করা শুরু করল। চাকরীর জন্য ডিগ্রি বিক্রি করা শুরু করল। রাজনৈতিক নেতৃত্বের আড়কাঠি শ্রেণী গড়ে উঠল। মানুষের নীতি হয়ে গেল শিথিল। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে পড়ল। অপরাধ প্রবণতা বেড়ে গেল। ধর্ষণ, হত্যা রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। রাজনৈতিক রেষারেষি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভাষা সন্ত্রাস এখন নিত্য নৈমিত্যিক ব্যপার।
দুর্নীতির কারণে সবকিছুর মান ক্রমশ নিম্নগামী। যদি টাকা দিয়ে সব কিছু কেনা যায় কষ্ট করে অধ্যাবসায় সহকারে বিদ্যার্জন হবে কি করে? ক্রমে দেখা যাবে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার অন্যত্র চাকরী পাচ্ছে না। কেউ তাদের বিদ্যাকে বিশ্বাস করছে না। এরা ডাক্তারী করলে মানুষ মারবে, বাড়ি কিংবা ব্রিজ বানালে তার ভেঙ্গে পড়বে।
যে অনৈতিকতা চলছে তার প্রধান কারণ ধর্মীয় বিভাজন। মুসলমানদের ভারতীয় স্রোতে না মিশে যাওয়ার প্রবণতা। মুসলমানদের এই প্রবণতার ফসল তুলছে ক্ষমতা লোভি রাজনৈতিক নেতা। মানুষের প্রতিনিধি হয়ে মানুষের কাজ না করে কেবল বিদ্বেষ ছড়িয়ে, অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরী করে ক্ষমতায় যারা আরোহন করবে তাদের কাছে সমাজ নামক ব্যাপারটার কোনো দাম নেই। ধর্ষণ হবে, খুন হবে, চুরি ডাকাতি রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়াবে।
সবার আগে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোচিং সেন্টার তুলে দিতে হবে। হেল্প বুক, গাইড বুক জাতীয় পুস্তক প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা লাগাতে হবে। স্কুল কলেজে মাস্টারমশাইরা যা পড়াবেন তার ভিত্তিতেই পরীক্ষা দিতে হবে। স্কুলেই সব ধর্মের মূল বার্তা ছাত্রদের বলতে হবে। ধর্মীয় বিভাজন মূলক ক্রীয়াকলাপ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করতে হবে। আমাদের নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে। কোনো দুরাচারি ব্যক্তি যেন নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারে।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তন না হলে সমাজ সুস্থ হবে না। মনে রাখতে হবে বাঙ্গালীর যা কিছু উন্নতি সবই ইংরেজদের সংস্পর্শে এসে। যেদিন ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লি চলে গেল পশ্চিমবঙ্গের অবনতি শুরু হয়ে গেল। পশ্চিমবঙ্গের দুরবস্থার কারণ প্রথমে হিন্দুত্ব ও পরে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি। কোনো মাদ্রাসা থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। এগুলো জটিল সামাজিক বিষয়। তাসলিমা নাসরিনের পশ্চিমবঙ্গে না থাকতে পারা দিয়েই প্রমাণ হয় পশ্চিমবঙ্গ পাঁকে নিমজ্জিত। সেই পাঁক কতটা দলদল রাধাগোবিন্দ কর হাসপাতালের ডাক্তারকে ধর্ষণ করে খুন করা সেটাই প্রমাণ করে।
আমাদের গন্তব্য অনেক দূর। অনেক পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের প্রয়োজন আছে।

Post a Comment